বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩০ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন: গর্ভধারণকে বিভিন্ন সমাজে বিভিন্নভাবে দেখা হয়। কোন সমাজে এটাকে দেখা হয় একটি অভিশাপ হিসেবে, কোন সমাজে বিকলাঙ্গতা হিসেবে, কোন সমাজে একটি রোগ হিসেবে এবং অনেকের কাছে এটা একটি বোঝা মনে হয়।
ইসলাম ধর্মের তত্ত্ব অনুযায়ী, এটি একটি আশির্বাদ এবং নারীদের ইবাদতের মর্যাদার কাছে পুরুষের মর্যাদা পৌঁছতে পারে না। নবিজি মুহাম্মদ সা. বলেন, মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত।
একজন নারী একটি শিশুর ওজনকে ৯ মাস পেটে ধারণ করে যে যাতনা সহ্য করে এ বিষয়টা তাকে পুরুষের চেয়ে এগিয়ে দেয়। গর্ভবতীকালীন মায়ের কষ্টের বিয়টি তুলে ধরে আল্লাহ্ তাআলা সুরা লুকমানের ১৪ নং আয়াতে বলেন, ‘তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্টে লালন করেছে।’
এই রচনায় গর্ভবতীকলীন সময়ের সর্বজন পরিচিত সুন্নতগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হবে, যেগুলো নবিজি সা. নারীদের পালন করতে বলেছেন গর্ভবতী হওয়ার দিন থেকে শুরু করে বাচ্চা ভূমিষ্ট হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।
গোপন রাখুন
কোন নারী গর্ভবতী হওয়া নিশ্চিত হলে বিষয়টি নিকট আত্মীয়দের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখা। এমনকি যারা এখবর শুনে খুশি হবে শুধুমাত্র তাদের জানানো। নবিজি সা. বলেছেন-
‘তুমি যা চাও সে ব্যাপারে সতর্ক থেকো, কেননা যে আশির্বাদ পায় সে হিংসারও শিকার হয়।’
হাদিসটি তাবারানি এবং আবু নুআইমে বর্ণিত। তবে, শিশু জন্মগ্রহণ করলে তার জন্মের কথা ঘোষণা করা সুন্নত।
কৃতজ্ঞ থাকুন
অনেকেই গর্ভবতী হওয়ার জন্যে বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করছে কিন্তু তার ভাগ্যে এই নেয়ামত জুটছে না। এই নেয়ামত পেয়ে আপনার উচিত আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা যদিও এ কারণে অসুস্থতা, বমি বমি ভাব, দূর্বলতা প্রভৃতি হয়। এসব কারণ যেনো আপনাকে অকৃতজ্ঞ না করে ফেলে।
মারইয়ামের মায়ের মতো আমল করুন
তিনি ছিলেন আশির্বাদপ্রাপ্ত নারী। কুরআনের সূরা আল ইমরানের ৩৫ নং আয়াতে আছে:
‘স্মরণ করুন যখন ইমরানের স্ত্রী বলল, হে আমার প্রভু আমার পেটে যা আছে তা আপনার নামে মান্নত করলাম। সুতরাং, আমার পক্ষ থেকে কবুল করুন। বস্তুত, আপনিই তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’
মারইয়াম যখন গর্ভে ছিলেন তখন তিনি এই দোয়া করতেন। আপনার নিয়তকে ছহি করার জন্য এবং গর্ভের বাচ্চাকে নেককার করার জন্য দোয়া করতে থাকুন।
আপনার সন্তানের জন্য কুরআন তেলাওয়াত করুন
প্রায় ২০ তম সপ্তাহে গর্ভের বাচ্চা কোনোকিছু শোনার সক্ষমতা অর্জন করে। মা প্রতিদিন কিছু কুরআন তেলাওয়াত করে বাচ্চার মাঝেও কুরআনের মাঝে সম্পর্ক জুড়ে দেয়ার এটাই উপযুক্ত সময়।
দোয়ায় লিপ্ত হোন
গর্ভবতী সময়ে সব ধরনের এবাদত করা যাবে, যেমন রাতে দীর্ঘ সময় ধরে নামাজ পড়া এবং গর্ভের বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা না হলে অনেক দিন ধরে রোজা রাখা যায়।
ভাল খাবার খান এবং ব্যায়াম করুন
অনেক লোকে আপনাকে ইয়োগা এবং মেডিটেশনের পরামর্শ দেবে, যেগুলো ক্লান্ত দেহে সজীবতা ফিরিয়ে আনে। কিন্তু মনে রাখবেন নামাজ হচ্ছে সর্বোচ্চ স্তরের মেডিটেশন যা আপনাকে এবং আপনার গর্ভের বাচ্চাকে শান্ত রাখবে।
আল্লাহর সাথে বন্ধন আলাদা করবেন না
দোয়া করে এবং একাকী আল্লাহর সাথে আপনার ভয় ও কষ্টের কথা বলে তার সাথে বন্ধন জুড়ে রাখুন।
আপনার বাচ্চার ব্যাপারে বিভিন্ন বিষয়ে এস্তেখারা করুন, যেমন- ডাক্তার নির্বাচন করা প্রভৃতি এবং নিরাপদ প্রসবের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।
মাতৃত্বকালীন শরিয়তের সুযোগ গ্রহণে অনীহা করবেন না
নবিজি সা. বলেন, ‘আল্লাহ্ তা‘আলা মুসাফিরের জন্য নামাজকে কসর করেছেন এবং রোজার বিধানকে সহজ করেছেন এবং তিনি গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী মায়েদের জন্য সহজ করেছেন। সুনানে নাসাঈ
এগুলোকে কোথাও লিখে রাখবেন যেনো পরে আদায় করতে ভুলে না যান।
সূত্র: OURISLAM24